রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি
রমজান মাসে রোজা পালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। এই পবিত্র মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, কামাচার এবং অন্যন্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট কার্য রয়েছে যা রোজা ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি ইসলামিক ফিকহ্ অনুযায়ী আলোচনা করা হলো:
১.ইচ্ছাকৃত পানাহার (Eating and Drinking Intentionally)
ইচ্ছা করে কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যায়। তবে ভুলে খেলে বা পান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করতে হবে। হাদিসে এসেছে: *“যে ব্যক্তি ভুলে রোজা অবস্থায় খায় বা পান করে, তার রোজা পূর্ণ করবে, কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।”* (বুখারি)।
২. শারীরিক সম্পর্ক (Sexual Intercourse)
দিনের বেলায় সঙ্গম করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং এর জন্য কাফফারা (৬০ দিন ধারাবাহিক রোজা) ও কাজা (ভাঙা দিনের পরিবর্তে রোজা) প্রয়োজন। তবে রাতের বেলায় সঙ্গম জায়েজ।
৩. ইচ্ছাকৃত বমি (Intentional Vomiting)
ইচ্ছা করে বমি করা রোজা ভঙ্গ করে। তবে অনিচ্ছাকৃত বমিতে রোজা অক্ষুণ্ণ থাকে।
৪. মাসিক ও নিফাস (Menstruation and Postnatal Bleeding)
মহিলাদের মাসিক বা সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত শুরু হলে রোজা ভেঙে যায়। পরে কাজা করতে হবে।
আরো পড়ুন..
৫. ধূমপান বা নেশাদার দ্রব্য (Smoking or Intoxicants)
ধূমপান, গাঁজা বা অন্য নেশাদার পদার্থ সেবন রোজা ভঙ্গ করে। এগুলি ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ায় কেবল রোজাই নয়, গুনাহেরও কারণ।
৬. শরীরে পদার্থ প্রবেশ (Substances Entering the Body)
নাক, কান বা ইনজেকশনের মাধ্যমে পুষ্টিকর তরল (যেমন স্যালাইন) প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যায়। তবে চোখে ড্রপ বা ইনসুলিন নেওয়া নিয়ে ফকিহদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
৭. অপবিত্রতা (Masturbation)
ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটানো রোজা ভঙ্গ করে এবং কাজা প্রয়োজন।
৮. *নিয়্যাতের অভাব (Lack of Intention)
রোজার নিয়্যাত (ইচ্ছা) ছাড়া দিনে পানাহার বন্ধ রাখলেও রোজা শুদ্ধ হয় না। নিয়্যাত রাতের বেলায় বা সুবহে সাদিকের আগে করতে হয়।
৯. হিজামা (কাপিং থেরাপি) (Cupping Therapy)
কিছু হাদিস অনুযায়ী, হিজামা করলে রোজাদারের রোজা ভেঙে যায় (আবু দাউদ)। তবে এ নিয়ে বিদ্বানদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
১০. ইসলাম ত্যাগ (Apostasy)
যদি কেউ ইসলাম ত্যাগ করে, তবে তার সকল আমল বাতিল হয়ে যায়, রোজাও এর অন্তর্ভুক্ত।
কাজা ও কাফফারা
– **কাজা**: অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাঙা রোজার বদলে অন্য দিনে রোজা রাখতে হয়।
– **কাফফারা**: সঙ্গমের মতো গুরুতর কারণে ৬০ দিন রোজা বা ৬০ জনকে খাওয়ানো প্রয়োজন।
ভুল ধারণা দূরীকরণ
– **দাঁত ব্রাশ করা**: টুথপেস্ট গিলে না ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না।
– **অস্বীচ্ছায় বমি বা রক্ত**: এগুলো রোজা ভঙ্গ করে না।
– **স্বপ্নদোষ**: অনিচ্ছাকৃত হওয়ায় রোজা অক্ষত থাকে।
উপসংহার
রোজা শুধু দৈহিক নয়, আত্মিক শুদ্ধতারও অনুশীলন। তাই রোজার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলা এবং সন্দেহের ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে রোজা পালনের তাওফিক দিন। আমীন। রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি কি কি
Written by AI
আরো পড়ুন..