লিভার ও কিডনি ভালো রাখার কার্যকরী উপায়
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। কারণ কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সময় কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তাই কিডনি রোগী নিজেও জানে না যে তার কিডনি রোগ হয়েছে। যখন রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু তখন সেটা অনেক বড় আকারের রোগ হয়ে গেছে। তখন সেটা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন। তাই কিডনি রোগ নিয়ে শুধু কিডনি রোগেরাই নয় সবার সচেতন হতে হবে। যেকোনো সুস্থ মানুষকেও জানতে হবে কিডনি রোগের প্রতিকার ও উপসর্গগুলো। এই পোস্টে আলোচনা করা হবে কিডনি রোগের প্রতিকার, কিডনি রোগের উপসর্গ, কিডনি রোগ কেন হয়, কিডনি রোগীদের খাবার, কিডনি রোগের চিকিৎসা এবং কিডনি ভালো রাখার উপায় । আসুন তাহলে শুরু করা যাক
কিডনি রোগের উপসর্গ
প্রথমত কিডনি রোগ হয়েছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। কারণ এখানে কোন লক্ষণ প্রকাশ হয় না। তাই আমাদের জানতে হবে কিডনি রোগ কেন হয়? নাতো কিডনি রোগের লক্ষণগুলো যা হয়।
প্রসাবে পরিবর্তন, প্রসাব কম, বেশি বা গারো হওয়া। আবার প্রসাবের জ্বালাপোড়া করাও ।
আরো পড়ুন..
কিডনি রোগের লক্ষণ।
- ব্যথা: পিছনের পিঠে ব্যথা করা এবং প্রসাবে ব্যাথা করা। তৎক্ষণাৎ জ্বর ও হতে পারে।
- প্রোসাবের সাথে রক্ত যাওয়া: এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন তাহলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- শরীর ফোলা ফোলা ভাব: আমাদের শরীরে কিডনির অন্যতম কাজ হচ্ছে দেহের বর্জ্যগুলো নিষ্কাশন করা। কিডনি যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বর্জ্য পদার্থ গুলো শরীরের জমে শরীর ফুলে যায়।
- মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়: কিডনি সমস্যা হলে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ কমে যায়। এতে ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ পরিমাণও কমে যায়। তাই মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়।
- শীত লাগা: কিডনি সংক্রমণ হলে গরম আবহাওয়াতেও শীত লাগতে পারে। এবং এর থেকে জ্বরও হতে পারে।
- ত্বকে র্যাস হওয়া: কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীরে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আর এই বর্জ্য পদার্থ গুলো শরীরে রেস তৈরি করে।
- বমি বমি ভাব: এটিও বর্জ পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়।
- ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া : কিডনি রোগে ফুসফুসের তরল পদার্থ জমা হয় যা আমাদের শ্বাস এর উপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া রক্তশূন্যতার কারনে ও শ্বাস নেওয়া কষ্টকর।
- পিঠের পেছনের দিকে ব্যথা: কিডনি রোগের ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিটার পেছনে ব্যথা হতে পারে। তাই এরকম লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে সাবধান হতে হবে।
আরো পড়ুন..
কিডনি রোগ কেন হয়? কারণ ও প্রতিকার।
কিডনি রোগ হওয়ার অনেকগুলো কারন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য দশটি কারণ ও প্রতিকার দেওয়া হল।
পরিমাণ মতো পানি পান না করা
কিডনি রোগ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিমাণমতো পানি পান না করা। আমাদের প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লিটার পানি পান করা উচিত।
প্রস্রাব আটকে রাখা
অনেক কারণে আমরা দীর্ঘক্ষণ প্রসাব আটকে রাখি। এটা আমাদের কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
বিট লবণ ও কাঁচা লবণ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকার। আমাদের উচিত এগুলা না খাওয়া।
ক্যাফাইনে বেশি আসক্তি
বর্তমানে আমরা বাজার থেকে যে সকল কোমল পানিও ক্রয় করে থাকি। এগুলা সবাই ক্যাফেইন যুক্ত । আমাদের উচিত যে সকাল পানি কম খাওয়া এবং সাধারণ পানি খাওয়া।
অতিরিক্ত ব্যথা নাশক ঔষধ খাওয়া
ব্যথার জন্য আমরা বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকি। এই ব্যাথা নাটক ওষুধ গুলোর প্রত্যেকটিরই পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া
কিডনি জনিত কোন সমস্যা থাকলে গরু-ছাগল ও মুরগির গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনি কারও দুর্বল করে দেয়। তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শাকসবজি খাবেন।
অ্যালকোহলে আসক্তি
সমাজে অনেকে আছেন যারা মদ্যপানে আসক্তি। তাদেরকে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধূমপানে আসক্তি
ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হয়। এটা আমরা সবাই জানি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের অভিমতে ধূমপান শুধু ক্যান্সারের জন্য নয়। ধূমপান আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জন্যই ক্ষতিকারক।
রাত জেগে থাকা
বর্তমানে আমাদের সমাজের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে রাত জেগে থাকা। এখন মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে যেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আবার ঘুম থেকে উঠে ও দেরি করে। এটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত অনেক বিশ্ব ভাঙ্গে এবং গড়ে। যেটা হয়ে থাকে রাত্রের দিকে। অনিয়মিত ঘুমের ফলে এই কার্যক্রমে ব্যাঘাত হয়।
সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া
সর্দিকা থেকে পাত্তা না দাও আমাদের অনেকের অভ্যাস। কিন্তু এটা খুবই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। এটা আমাদের শরীরের সকল রোগকে শক্তিশালী করে তোলে। তাই সর্দি কাশি হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুন..
কিডনি রোগীদের খাবার
কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে অবশ্যই বেশি বেশি করে শাকসবজি খেতে হবে।
পরিমাণ মত প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার খাওয়া। বেশি বেশি করে ফল-মূল খাওয়া। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া। কিডনি রোগ হলে ধূমপান, মধ্যপান , ক্যাফে ইন সহ বাহিরের খাবার থেকে বিরত থাকা। অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
শেষ কথা: রোগ বালাইকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। একটি ছোট রূপ ও আপনার জীবনের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারেন। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। প্রতিদিনের কাজকর্ম খাওয়া দাওয়া সকল কিছু নিয়মমাফিক করবেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। আপনি মুসলিম হয়ে থাকলে অবশ্যই নামাজ পড়বেন। নামাজ আমাদের জীবনের সকল গুনাহ এবং বালা মুসিবত থেকে মুক্ত দেয়।